মিরোনা খাতুন নামে এক উজ্জ্বল মশালের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরুষদের পেশাদার ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন মিরোনা খাতুন। বহির্বিশ্বে এমন নজির দেখা গেলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এই দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম।বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন লিগে ঢাকা সিটি এএফসি ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেছেন মিরোনা। কোন প্রকার দয়া বা কারো করুণায় এই দায়িত্ব পাননি মিরোনা। এএফসি বি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোচ তিনি।কোচিংয়ের যাবতীয় শর্ত মেনেই মিরোনাকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা সিটির দায়িত্ব। নিজে ছিলেন দীর্ঘদিন জাতীয় দলের খেলোয়াড়।জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নৌ বাহিনীতে এথলেট হিসেবে খেলেছেন কিছুদিন। তারপরেই করেন এএফসি বি লাইসেন্সের কোর্স। ফলাফল পেশাদার গোটা একটা ফুটবল দলের প্রধান কোচ এখন তিনি। মিরোনার অবশ্য এখানেই থেমে যাওয়ার ইচ্ছা নাই ... ...
বাংলাদেশে নারীদের পথ খুব একটা সোজা না। নারী কে প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে তারপর তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হয়। একজন নারী এগিয়ে যাবে আর তার সামনে কোন প্রতিবন্ধকতা আসবে না এমন তো শুধু বাংলাদেশে না, পুরো দুনিয়া জুড়েই হয় না। কম আর বেশি, নারীর অবস্থা করুণ। যেখানে সোজা রাস্তায় হেঁটে গেলে কথা শুনতে হয় সেখানে একজন নারী খেলবে ক্রিকেট? এশিয়া কাপ জেতার পরে এখনো অকল্পনীয় মনে হয় ব্যাপারটাকে। যারা ওই সব প্রবল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে তারা জয়ী হবে না তো কে হবে? ... ...
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতই কুৎসিত যে এখানে নকলের মত অপরাধ করে হলেও ক্লাস নাইনের মেয়ে কে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হয়। আর আমাদের শিক্ষকগণ এতই মহান যে এতে নিজেদের অপরাধ, নিজেদের নৈতিকতা কে একবারের জন্যও প্রশ্ন না করে সেই ছাত্রী কে, তার বাবা মা কে অপদস্থ, অপমান করে। এমন ঘটনা যদি দেশের মফস্বল শহরের অখ্যাত কোন স্কুলে ঘটত তাহলে এটা হয়ত মানুষজনের নজরেও আসত না। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটে বসে আছে দেশের সেরা স্কুলে।সেরা স্কুলের চেহারা যদি এমন হয় আশা করি বাকিদের অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। তাই বাকিদের নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য আজ পর্যন্ত হয়নি, সম্ভবত আর হবেও না। ... ...
এক নারীকে পুরোপুরি উলঙ্গ করে তার ওপর নির্যাতন করছে প্রভাবশালী মাস্তানরা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার,বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী,বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর।তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে। যেখানে এই নারীর যৌনাঙ্গে টর্চ লাইট ও হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব খারাপভাবে নির্যাতন করা হয়েছে,যা ৭১এর বর্বরতাকেও হার মানায়। সম্পূর্ণ ভিডিওটি প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন পোস্টদাতা। এই একটি ঘটনার বহুমাত্রিকতা আসুন একটু তলিয়ে দেখি, এই সদম্ভ উল্লাসকারী ধর্ষকগুলির বয়স কত? আঠারো থেকে ত্রিশ। পরপর দুটি প্রজন্ম। তারা কেন করেছে এই ঘৃণ্য অপরাধ? আমাদের বিশ্বাসযোগ্য বিশ্বাসকে ভেঙেচুরে, ভাবতে পারেন এই জেনারেশন কাজটি করেছে তাদের ‘পবিত্র দায়িত্ব’ ভেবে! ভাবতে পারেন, নারীটির প্রাক্তন স্বামী তার ঘরে এসেছিল বলে তাকে শায়েস্তা করার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ তারা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে কাঁধে। ভাবুন, পড়শির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রজন্মের বৌদ্ধিক পতন। ... ...
পলান সরকার একার উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন এক চলমান গ্রন্থাগার। ঝোলা ভর্তি বই নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে তিনি বই পৌঁছে দিতেন বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, পাঠকের দরজায়। নিজের বই পড়ার অভ্যাস তিনি চারিয়ে দিয়েছিলেন প্রত্যন্তে ও প্রান্তে। থেমে গেল পলান সরকারের চলা, কিন্তু তাঁর তৈরী পাঠকদের মননে তাঁর কীর্তি থেকে যাবে, থেকে যাবে তাঁর স্বপ্ন। তিনি যে আলোকবর্তিকাটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন আজীবনের সঞ্চয়ে ও শ্রমে, তা আলো দেবে ভবিষ্যতকে। পলান সরকারকে নিয়ে দু'টি লেখা, লিখেছেন হাসনাত কালাম সুহান ও দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম। ... ...
বাস্তবে, হিন্দু ধর্মের মন্দির, পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য জুমার নামাজের যে মিছিলগুলো বের হয়েছিল, মসজিদে-মাদ্রাসায় মাইকিং করে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত, জেহাদি জোশে যারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর!’ ধ্বনিতে বিধর্মী-কাফেরদের ওপর হামলা করেছিলেন, ভাঙচুর, লুঠপাঠ ও অগ্নিসংযোগ করে বদলা নিতে মরিয়া ছিলেন, তাদের কোনো দল ছিল না, ওই জেহাদি মিছিলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি – সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল, মিছিলকারীদের একটিই পরিচয় তখন যেন প্রধান, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’ ... ...
এসব ইশকুলের অধ্যক্ষা মাননীয়রা ছাত্রীদের বয়স, স্বাভাবিক অনায়বোধ, সহজাত অভিমান না বুঝে অমানবিক এবং বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকদের চরমতাকে বিবেচনা করে অভিভাবকসহ ছাত্রীদের হরহামেশ অপমান করে থাকে। এদের না আছে আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে অন্যদের মানব মর্যাদাবধের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। ছোটবড়, ছেলেমেয়ে, ধনী নির্ধনের মানবমর্যাদা বোধে আঘাত করা যে অপরাধ— এই শিক্ষা, শিষ্ঠাচার, প্রয়োজন এবং ভব্যতা সভ্যতা তাদের নেই। এসবের ধারও তারা ধরে না। কেননা একজন অরিত্রী মরে গেলে আরো দশজন অরত্রী অই সিটে ভর্তি হওয়ার জন্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আছে তাদের বাবামায়েরা। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এই প্রথম এ ইশকুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু অরিত্রী কি ফিরবে ? ওর বাবামা কি ফিরে পাবে কাঠগোলাপ কানে গোঁজা হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে ? ... ...
শত শত বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে তাদের মধ্যে এসব স্বভাব প্রবিষ্ট হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের কর্তব্য ছিল তাদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় পারদশী করে গড়ে তোলা। কিন্তু ঐতিহাসিক বিদ্বেষবশত তারা তা করেনি। ফলে একটা পর্যায়ে এসে এই ‘একটা অংশ’ রোহিঙ্গা তাদের জন্য বোঝা বা জঞ্জাল হয়ে দাঁড়ায়। এই অংশের দায়ভার পড়ে যায় গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এই ‘জঞ্জাল’ সাফ করতে তারা শুরু করে গণহত্যা। এটা তাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কালিমা কোনোদিন তারা মুছতে পারবে না। ... ...
সেই কালো সময়ের উপরে লজ্জা লিখে লজ্জা পেয়ে দেশ ছাড়তে হয়ে ছিল তসলিমা নাসরিনকে। সেখানেও এমন এক পরিবারের কথা বলা হয়েছিল যারা শত বাধা পেরিয়েও দেশ ত্যাগ করে না। বাড়ির প্রধান একজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাও। নিজের মেয়েকে যখন ধর্ষণ হতে দেখে তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দেশ কাকে বলে তা নিয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়ায় তারা। আমরা ভদ্রলোক মানুষ, আমরা এই সব নষ্ট কথা আমরা আমাদের সাহিত্যে মেনে নিতে পারি না। লজ্জা আসলে কার এই রকম একটা কঠিন প্রশ্ন সহ্য করা আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। লজ্জা যখন বলে - “ধার্মিকেরা কি কখনও পারে বিধর্মীর সম্পদ লুট করে নিজের ধর্ম রক্ষা করতে? এতো আসলে ধার্মিকের কাজ নয়। এ হচ্ছে গুণ্ডা বদমাশের কাজ।” তখন সম্ভবত কোন উত্তর থাকে না জিহাদি জুলুসে জ্বলতে থাকা আমার ভাইয়েদের কাছে। আর তাই দেশ থেকে বাহিরে তসলিমা। ... ...
এবার আর মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই। হালখাতা নেই। কলকাতার রাজপথ শুনশান, ঢাকার রাজপথে আল্পনা হবে কিনা জানা নেই। তবু বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দেওয়া পয়লা বৈশাখ আছে, দুর্যোগের মধ্যেও। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে, এক দুর্যোগের দিনে, গানটি লিখেছেলন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে ছিল বঙ্গভঙ্গ রোখার সময়। রাখিবন্ধনের সময়। কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন, কবি স্বয়ং, সেই দুর্যোগের দিনে। এবারও দুর্যোগ আছে। কিন্তু রাজপথে নামা নেই। দুর্বৃত্তরা আছে, আবারও বঙ্গভঙ্গের খাঁড়াও আছে মাথার উপর। গানটিও আছে। হলই বা একটু পুরোনো। যার প্রাসঙ্গিকতা আছে, তাকে নতুন করে গাওয়া যেতেই পারে। অন্য মোড়কে রইল সেই গানই। এবার পয়লা বৈশাখে। ঠিক সকাল সাড়ে আটটায়, দেখার জন্য ক্লিক করুন। ... ...
অন্তর্জালে ঢুকে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখতে পাব স্বাধীনতার পর ১৯৬১-র মধ্যেই হারিয়ে গেছে ২২০টি। আগের তো কোনো হিসাবই নেই। পরেরও না। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তো জনগণনা বন্ধ। মানুষের খবরই কেউ রাখছে না, তার আবার ভাষা! ... ...
না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি 'আসাম'এর বাঙালিদের, ব্যাঙ্গালোরে আপাতত বিপদ নেই। আমরা 'মিড্ল্ ক্লাস', আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতীয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কীভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে 'আম্গো বাসা কইলকাত্তা' ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায় 'আম্গো ভাহা অহইম্মা' বলে, ভূপেন হাজারিকাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে 'অহইম্মা' হয়ে। ... ...
গল্প শুনতে যে মানুষ ভালোবাসে, তার বোধহয় গল্প বলার লোকও ঠিক জুটে যায়। পরের দিন সুমনকাকু আসতেই তাকে বললাম, তোমার বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বল। স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখ নিয়ে শুরু করল সুমন কাকু, “বাবাকে ওরা গুলি করে মেরেছিল। আমি আর দাদা পালিয়েছিলাম, আমাদেরও ধরেছিল, কিন্তু পরে ছেড়ে দেয়। তখনই পালিয়ে আসি এখানে।” যে লোকটা এমনি সময় বড্ড বেশি কথা বলে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলার সময় দেখলাম অল্প কথায় কাজ সারল – আমি আর ঘাঁটালাম না। সত্যি বলতে, জিজ্ঞেস করার সাহস হল না। সুমন কাকু কিন্তু তখনও হাসছেন, বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা বলছেন – কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ-ক্ষোভ কিছুই নেই – কেমন যেন নির্লিপ্ত। এটাই দেশভাগের দান, এই মানুষগুলোর চোখের জল কেড়ে নিয়েছে ৪৭, ৭১ –এই বছরগুলো। এরা আর কিছুতেই আশ্চর্য হয় না। ... ...
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিবেশ জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সিকিমবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পশ্চিম বাংলা, আসামেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিকর এসব বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে। গনসংহতি আন্দোলন সহ বাংলাদেশের বাম মোর্চা গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৪ তিস্তার পানির দাবিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দোয়ানি পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিস্তা নিয়ে উদ্ভুত এই সমস্যা একা বাংলাদেশের মরুকরণ বা খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা নয়, কিংবা পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের সমস্যা নয়। অথবা এককভাবে তা সিকিমের আদিবাসী, সাধারন মানুষদের জীবন, জীবিকা, ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামও হতে পারেনা। ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। ফলে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের এই সংগ্রাম সিকিম, পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ সহ সকলের। ... ...
আমার ছোটবেলা ইতিহাসের এক ক্রান্তিকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত অবস্থা, ৫০-এর দুর্ভিক্ষ(খ্রীষ্টাব্দ ধরলে ১৯৪৩), ভারতের স্বাধীনতা, নেতাজীর যুদ্ধ প্রচেষ্টা, বোম্বাই-এর রাজকীয় নৌসেনার বিদ্রোহ, দেশভাগ(বাংলা ও পাঞ্জাব), পাঞ্জাবের-তত-নয় কিন্তু বাংলার অকথ্য দুর্দশার শুরু – যা এখনো এই ৭০-৭১ বছর পরেও চলছে। এতে বাংলার সাধারণ মানুষের কিছু ভুল থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভুল, স্বার্থপরতা, চিন্তার দৈন্য, দলাদলিও কম দায়ী নয়। তাই ভাবলাম, ওই সময়ে আমাদের বাড়ির, পাড়ার, গ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু লেখা সম্ভব, চেষ্টা করব। মনে রাখতে হবে যে এই লেখা ইতিহাস লেখা হয়। বরং কৈশোরে পা দেওয়া আট বছরের ছেলে যা দেখেছিল ও নিজের মত বুঝেছিল, তার বর্ণনা। তবে এটাও ঠিক বয়স বাড়লে বুদ্ধি সামান্য পেকেছে, আর তাই আগের দেখাগুলি কখনো কখনো অন্যরকম মনে হয়েছে। তাই একটু “ইধার উধার” হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। ... ...
যারা বোরো রাজনীতির হাল হকিকৎ সম্বন্ধ ওয়াকিবহাল আছেন তারা সবাই জানেন কী ভয়ানক রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র ছিলো এই রাজনীতি। বহু মধ্যপন্থী বোরো নেতাকে সরাসরি মেরে ফেলা হয়। বোরোলিবারেশন টাইগার(বিটিএল), (যেটির নেতৃত্বে ছিলেন এই মোহিলারিই, পরে অব্শ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে দেন)। বা আগেকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ড(এন ডি এফ বি) - এই দুই দলের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে বহুজন হতাহত হন। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অবাধ জোগান এইসব আন্দোলনকে খুব সহজেই হিংসাত্মক করে তুলেছিল। এই হিংসা ও খুনোখুনির রাজনীতি বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলে চলে আসছে, এমন নয় যে শুধু "অনুপ্রবেশকারী"দের সাথেই প্রথম এখানে হিংসার রাজনীতি পা রাখল। ... ...
স্মরণ করা ভাল. বাংলাদেশে তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার‘ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ‘ বা ‘এনকাউন্টার‘ এর ইতিহাস খুব নতুন নয়। বলা যায়, স্বাধীনতার পর পরই এটি এ দেশে চালু হয়। ওপারে নকশাল নিধনের নামে এটি চালু করে ইন্দিরা গান্ধি সরকার। একই সময় এপারেও নকশাল বা সর্বহারা নিধনে ব্যবহৃত হয় ‘ক্রসফায়ার‘। আর সম্ভবত এ দেশে প্রথম ‘ক্রসফায়ারের‘ শিকার হন– পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ সিকদার। আলোচিত এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? অর্থাৎ ‘ক্রসফায়ারের‘ অমোঘ শক্তিটিকে বৈধতা দিতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ... ...
এই রকম একটা আন্দোলন হওয়ারই ছিল। ঢাকার রাস্তা এক মরণ ফাঁদ সবার জন্য। ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ।সিটি বাস গুলার আচরণ গুলার ছবি দিয়ে হলিউডের সিনেমা বানানো যাবে অনায়াসে। রেডিসনের সামনে তবু অনেক কম হয়। বনানী, ফার্মগেট, আসাদগেট শাহবাগ এলাকার ছবি তো রীতিমত হরর ফিল্ম কেউ হার মানায় সময় সময়। ঢাকার বাহিরের চিত্রও প্রায় একই রকম। সমস্যা হচ্ছে ঢাকার বাহিরের খোঁজ মানুষ একটু কমই রাখে। ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ জানে না দৈনিক কি পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়। বড় কোন দুর্ঘটনা না হলে পত্রিকার চারের পাতার আট নাম্বার কলামের নিচের দিকে থাকে এই সব সংবাদ। আমরা খোঁজও নিয়ে দেখি না, দেখার প্রয়োজনও বোধ করি না। কোথাও কোন টু শব্দ হয় না। যার কারনে শ্রমিক নেতা তেলতেলে হাঁসি হাঁসার সাহস পায়। দিনের পর দিন এই চলে আসছিল।এবার নতুন যোগ হল ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখার!! ... ...
১৯৪৮ সালে বার্মা আবার বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রোহিঙ্গারাও এই স্বাধীনতা আন্দোলনে জেনারেল অং সানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বর্মীবাহিনীর মধ্যে থেকে যায় সেই পুরনো ক্ষোভ―রোহিঙ্গারা একদা বৃটিশদের সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সাময়িকভাবে মগ-রোহিঙ্গা দূরত্ব কমে এলেও স্বাধীনতার পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দূরত্বের কারণ সেই পুরনো ক্ষোভ। ১৯৪৭ সালে নতুন শাসনতন্ত্রিক পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রণীত ভোটার তালিকায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদগুলোকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আবারও শুরু হয় সংঘাত। ১৯৪৮ সালে আবারও রোহিঙ্গারা হত্যাকা-ের শিকার হয়। ... ...
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে। ... ...